Header Ads

Header ADS

দুঃখের শেঁকড়ে বিষ্ময়কর সুখ

 

সাগর আল হেলাল

বটতলায় বসে চোখ বন্ধ করে সুবল মনানন্দে ভজন গাইছিলো- “চাই না মাগো রাজা হতে -----------”। সুবলের সংগীত যেন শুনছিলো বটবৃক্ষের পাতারাও। সবাই কেমন চুপ হয়ে ছিলো। মৃদু হাওয়া বইছিলো। তারপরও পাতাগুলো নড়ছিলো না। মা উচ্চারণে যেন মাটিও খুশি হয়। সুবাস ছড়াতে থাকে। মাটির গন্ধ খুব ভালো লাগে সুবলের। মিষ্টি মাটির গন্ধ বুকে নিয়ে সুবল গেয়ে চলে “চাই না মাগো ------”।

একজন বৃদ্ধ লোক এসে বসে বটতলায়। ঘাড় নেড়ে নেড়ে সে-ও শুনতে থাকে সুবলের অন্তর নিংড়ানো সুরে গাওয়া ভজন সংগীত। সুবল গান শেষ করে চোখ খোলে। বৃদ্ধকে দেখে শ্রদ্ধা জানায়। হাসি মুখে কুশলাদি অবহিত হয়। বৃদ্ধের কথা শুনে সুবল হো হো করে হেসে ওঠে।

বৃদ্ধ বলছিলো- অনেক দিন যাবৎ সে এক বাড়িতে গৃহভৃত্যের কাজ করতো। বাড়ির মালিক এমনিতে খুব ভালো, কিন্তু কেবলই মিথ্যে কথা বলতো। পুরনো চাকর বলে সে তার মালিকের সকল খবরই অবহিত ছিলো। কিন্তু তার মালিক যখন অন্যের সাথে কথা বলতো- তখন কোন কথারই মিল সে খুঁজে পেতো না। ধীরে ধীরে সে বুঝে গেলো তার মালিক আসলে একজন মিথ্যেবাদী।

মালিকের এহেন স্বভাব বৃদ্ধকে খুব পীড়া দিতো। সে ভাবতো মালিকের কোন কিছুতেই অভাব নেই। তার মিথ্যে বলার কোন প্রয়োজনও পড়ে না। তারপরেও সে মিথ্যে বলে। মালিকের এই স্বভাব কি করে পরিবর্তন করা যায়, তা নিয়ে খুবই বিচলিত ছিলো সে। এক রাতে সে স্বপ্নে দ্যাখে- এক সাধু বাবা এসে তাকে জিজ্ঞেস করছে -

- বল, তোর কি পেরেশানী ? তোর মালিক মিথ্যে কথা বলে ? এই ধর, সত্য বৃক্ষের সত্য ফল। তোর মালিককে খেতে বলবি, সে আর মিথ্যে কথা বলতে পারবে না।
পরদিন বৃদ্ধের হাতে ফলটি দেখে তার মালিক জিজ্ঞেস করে-
- এটা কি ?
- সত্য বৃক্ষের সত্য ফল।
- এটা খেলে কি হয় ?
- সে আর মিথ্যে কথা বলতে পারে না।
- কার জন্য এনেছিস ?
স্বপ্নের বিবরণ দিতে দিতে বৃদ্ধের চোখ ছলছল করে ওঠে। দীর্ঘদিন যার নিমক খেয়েছে, তাকে ভালো রাস্তায় আনার চেষ্টা তাকে আজ ভিখিরিতে পরিণত করেছে। সে তাকে ভালো করার চেষ্টা না করলে এই বয়সে তাকে চাকরীটা হারাতে হতো না। বৃদ্ধ বয়সে তাকে কে-ই বা আর কাজ দিবে ! ভিক্ষে করেই দিনাতিপাত করতে হবে অবশিষ্ট জীবন।
সুবলের হাসি যেন থামতেই চায় না। আরতি দেবীর কথা মনে পড়ে যায় তার।

-
০৭.০৪.২০২২

চলবে-

No comments

Powered by Blogger.